পাম Parajubaea torallyi (পামা চিকো, বলিভিয় পাহাড়ি নারিকেল)

ছবি

বলিভিয় পাহা[ড়ি নারিকেলের বীজ

Parajubaea torallyi হলো দক্ষিণ আমেরিকার একটি সুগঠিত কষ্টসহিষ্ণু পামগাছ। উপরন্তু এর প্রাকৃতিক আবাসক্ষেত্র, বলিভিয়ার বাইরে উদ্যানপালকদের দ্বারা কদাচিৎ চাষ করা হয়, এর বৃহদাকার বীজের কারণে (যার মানে এর স্থানান্তর খরচ উচ্চ)।

বলিভিয়ায় এটি স্থানীয়, এটি জন্মায় শুষ্ক এবং ধুলিময়, আন্ত:এন্ডিয়ান উপত্যকায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৭০০-৩৪০০ মিটার লম্বিক উচ্চতায়। কাজেই, এই পামগাছটি বিশ্বের যে কোন জায়গার সর্ব্বোচ্চতম পামের প্রজাতি। এই উচ্চতায় কদাচিৎ ২০ °সে এর উপরে তাপমাত্রা এবং রাত্রে হিমবাহ বিরল নয়। তাপমাত্রা শীতের মাসগুলোতে -৭ °সে পর্যন্ত নীচে প্রায়শই পড়ে যায় (জুলাই ও আগষ্ট) এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাত মাত্র ৫৫০ মি.মি.।

এর অনাবৃষ্টি, তাপ, ঠান্ডা, হিম সহনশীলতা এবং অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থা, এবং সুন্দর অবয়ব বজায় রাখতে এর সামর্থ্য, কেবল শোভাবর্ধক হিসাবেই নয়, চরম কাঙ্খিত প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্য হিসাবে উষ্ণ আবহাওয়ামন্ডল ও উপ‌-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এটি ব্যাপক সমাদৃত। ঐসব এলাকায় যেখানে হিমবাহের প্রকোপ আছে সেগুলোতে শীতকালীন সুরক্ষা বা হিমবাহমুক্ত পরিবেশ দরকার পড়ে। বলা হয় ইউরোপে ৩°সে. তাপমাত্রায় হিমবাহ। সর্বনিম্ন যে তাপামাত্রায় এই পামগাছটি চাষ করা যায় তা হলো – ৮° সে.। এই গাছগুলি তাদের সমস্ত পাতা হারিয়ে ফেলে, কিন্তু টিকে থাকে এবং বসন্তকালে নতুন পাতা বের হয়।

বলিভিয়াতে এই পামগাছটি ১৪ মিটার উচু এবং দেহকান্ড ২৫-৩৫ সেঃ মিঃ ব্যাসের হয়ে থাকে। যেসব পামগাছের বয়স ১০০ বছর বা তারচেয়ে বেশী, সেগুলো ৩০ মিটার পর্যন্ত বড় হয় এবং দেহকান্ড ৫০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত ব্যাসের হয়। এক একটি সুন্দর চূঁড়া প্রায় ২০টি পাতা দিয়ে ঘেরা এবং সেগুলোর কোন কোনটি ৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে! বলিভিয়ার বাইরে জন্ম নেয় গাছগুলো অবশ্য ছোট হয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক আবাসভূমিতে ফলের আকৃতি অনুসারে আলাদা দুই ধরনের হয়ে থাকে এবং সাম্প্রতিক কালে দুইটি আলাদা জাতকে বর্ণনা করা হয়েছে – ছোট আকৃতির ফলপ্রদায়ী হলে P. torallyi রূপভেদ. microcarpa এবং বড় আকৃতির P. torallyi রূপভেদ. torallyi। বহিরাকৃতিতে তেমন কোন পার্থক্য না থাকলেও রূপভেদ. microcarpa বড় আকৃতির ভ্রাতৃশ্রেনীর সমপর্যায়ে পৌঁছায় না, কিন্তু অভিযোজন ও সামর্থ্যের দিক থেকে কোন অংশে কম নয়। বীজগুলোর অংকুরিত হওয়া নিয়েও কোন কুখ্যাতি নেই। অংকুরায়ন অনিশ্চিত হলেও সঠিক পরিবশে বুনতে দিলে খুব তাড়াতাড়ি পল্লবিত হয়ে থাকে, যেমন বীজতলার উপরে, অর্ধাংশ পুতে রাখলে এবং সামান্য ভেজা করে রাখলে। সঠিক পরিচর্যা হলে, লঘু উপ-গ্রীস্মমন্ডলীয় আবহাওয়ায় ও পর্যাপ্ত সূর্যালোকে চারগাছগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে এবং উচুঁ, শক্ত-দেহকান্ডের বিশাল মাকুকৃতি উভয়দিকে দৃঢ় শাখাযুক্ত পামগাছে পরিণত হয়। এর অনাবৃষ্টি, তাপ, ঠান্ডা, হিম সহনশীলতা এবং অন্যান্য প্রতিকূল অবস্থা, এবং সুন্দর অবয়ব বজায় রাখতে এর সামর্থ্য, কেবল শোভাবর্ধক হিসাবেই নয়, চরম কাঙ্খিত প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্য হিসাবে উষ্ণ আবহাওয়ামন্ডল ও উপ‌-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এটি ব্যাপক সমাদৃত।

Parajubaea torallyi একটি জনপ্রিয় শোভাবর্ধক গাছ এবং একে পার্ক বা হাটাচলার রাস্তার দুপাশে লাগানো হয়। ইকুয়েডর এবং দক্ষিন কলম্বিয়াতে Parajubaea cocoides প্রায়শই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ থেকে ৩০০০ মিটার উচ্চতায় জন্মায় – এটি একটি কিছুটা হিমবাহ সহিষ্ণু ধীর বর্ধনশীল পামগাছ। যেহেতু এটি প্রায় Parajubaea torallyi ‘র মতই এবং এর প্রাকৃতিক আবসভুমি অজ্ঞাত, একে Parajubaea torallyi ‘র বিকশিত রূপ বলে স্বীকার করা হয়।

পামের সবচেয়ে ছোট প্রজাতি হলো Parajubaea sunkha যা ১৯৮৬ সালে আবিস্কৃত হয়েছে। এটি কেবল ৮ মিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং বলিভিয়ার সান্তক্রুজ জেলার ভেল্লেগ্রান্ডের আন্দিয়ান উপত্যকায় যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতায় জন্মায়। শ্রেনীকরন গবেষনায় আগে এটাকে ভুলবশত Parajubaea torallyi হিসাবে চিহ্নিত করা হতো, পরে এটার নাম দেয়া হয় Parajubaea sunkha

Parajubaea প্রজাতির পামগাছগুলো সহজে চাষ করা যায়। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি হলো বীজ ব্যবহার করে। আপনাকে কিন্তু অনেক ধৈর্য্যশীল হতে হবে, কারণ বীজগুলো খুব ধীর গতিতে পল্লবিত হয়ে থাকে এবং কপাল খারাপ থাকলে, এজন্যে দেড় বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু বীজ এক মাসেই অংকুরিত হয়ে যায় কিন্তু অন্যগুলো পল্লবিত হতে এক বা এমনকি দুই বছর সময় নেয়। উপগ্রীস্মমন্ডলীয় এলাকায় বলে এগুলোকে নীম্ন তাপমাত্রায় রাখলে ভাল হয়, যেহেতু উচ্চ তাপামাত্রায় (পামের অন্যান্য প্রজাতির মতো নয়) অংকুরায়ন প্রক্রিয়াতে এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। উচ্চ তাপমাত্রা মানে শুষ্ক অবস্থা, যা অংকুরায়নের জন্য উপযুক্ত নয়।

বুনার আগে বীজগুলো ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত ২০° সে তাপমাত্রার কাছাকাছি পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। বড় আকৃতির বীজগুলোকে দুই সপ্তাহের মতো রাখতে হয়। প্রতিদিন পানি বদলাতে হয়। ভালো অংকুরায়নের জন্য বীজগুলোর চামড়া কেটে ফেলাও হতে পারে।

বীজ পানিতে ভিজানোর প্রক্রিয়াটি এর সুপ্তাবস্থা ভাঙায় এবং বর্ষাকালে এর অভিষেক ঘটানো হয় যেটা অংকুরায়নের উপযুক্ত সময়। বলিভিয়ার শুস্ক মৌসুমে সুপ্তাবস্থা প্রতিরোধী বীজগুলো পল্লবিত হয় না ( শীতকালে, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত)।

ভেজানোর পর বীজগুলো একটি পাত্রে বা প্লাস্টিক ব্যাগে বুনতে হয় – খেয়াল রাখতে হবে বীজের অর্ধাংশ যেন মাটির ভিতরে থাকে এবং তাপমাত্রা যেন ১০ থেকে ২০°সে এর মধ্যে থাকে।

দিন(উচ্চ) এবং রাতের(নিম্ন) তাপমাত্রার ভিন্নতা অংকুরায়নের উপর একটি ধনাত্ত্বক প্রভাব ফেলে। বীজ বোনা হয়ে গেলে ছোট চারগাছগুলোর সহনসীমার বাইরে অতিরিক্ত পানি দেয়া উচিৎ নয়। Parajubaea এবং অন্যান্য প্রজাতির পাম চাষের মধ্যে পার্থক্য হলো এর জন্য কম তাপমাত্রা এবং কম পানির প্রয়োজনীয়তা।

বীজ বোনার পর বীজগুলোকে তিন থকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে এবং পল্লবিত বীগুগুলোকে আলাদা পাত্রে রাখতে হবে। যে বীজগুলো ছয় মাসের মেধ্যেও অংকরিত হয় না তাদের সম্বন্ধে পামচাষীরা নিন্মবর্ণিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

কয়েকমাসের জন্য বীজগুলোতে পানি দেয়া বন্ধ করুন এবং মাটি শুকনো হতে দিন। বীজ মাটি থেকে তুলে আনুন তারপর এক সপ্তাহের মত সময় পানিতে ভিজিয়ে আবার বুনুন।

বীজুগুলোর পরবর্তী অর্ধ-বছরের মধ্যে পল্লবিত হওয়ার উচিৎ। কোন বীজ যদি পল্লাবিত না হয় তাহলে প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন এবং পরবর্তী বর্ষায় অবশিষ্ঠ বীজগুলো পল্লবিত হবে।

Parajubaea বীজের অংকুরায়ন হার প্রায় ১০০%, আপনাকে কেবল যথেষ্ঠ ধৈর্য্যশীল হতে হবে এবং অলস বীজগুলোকে শুস্ক মৌসুমটা থাকতে দিন।

ছোট চারাগাছ উঠে গেলে এগুলো খুব শক্ত থাকে, কিন্তু এগুলোকে বেশী পানি দেবেন না। একটি পাম চারাগাছের জন্য দরকার মাঝারি পরিবেশ (প্রাকৃতিক আবাসভূমিগুলোতে এগুলো বড় পামগাছের ছায়ায় জন্মায়) আর বড়ো পামগাছের জন্য দরকার সূর্যালোকিত পরিবেশ।

Parajubaea প্রজাতির পামগাছটি দক্ষিন আমেরিকার অন্যতম বিপন্ন প্রজাতি। কারণটা হলো প্রাকৃতিক আবাসভূমির ধ্বংসসাধন, কৃষির জায়গা প্রসারন. কাঠ কাটা এবং গবাদি পশুর অতিরিক্ত চারণ। পামগাছগুলো খুবই ছোট জায়গার মধ্যে জন্মায়, যে একে গুরুতর করে এবং বিলুপ্তির ঝুকিতে রাখে। বৃহদাকার বীজের জন্য গাছগুলোর সম্প্রসারন ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন প্রাণী যেটি পামগাছকে সম্প্রসারিত হতে সাহায্য করে তা হলো জমকালো ভল্লুক (Tremarctos ornatus), এই প্রাণীগুলোও মানুষের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন।

Printed from neznama adresa